নভেম্বর ২০২৪ এই পর্যন্ত, বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে 400-র বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। এটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দীর্ঘায়িত বর্ষাকাল, শহুরে জনবসতির ঘনত্ব, এবং বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎসার দেরি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলো হলো:

১. মৃদু ডেঙ্গু জ্বর

  • উচ্চ জ্বর (৪০°C/১০৪°F)
  • তীব্র মাথাব্যথা
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • মাংসপেশি এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা
  • বমি বমি ভাব এবং বমি
  • জ্বরের ২-৫ দিনের মধ্যে ত্বকে লালচে দাগ

২. ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF)

  • সাধারণ ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর পাশাপাশি:
    • দাঁতের মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত
    • সহজেই আঘাতের চিহ্ন (ব্রুইজ)
    • বমি বা পায়খানায় রক্ত
    • তীব্র পেট ব্যথা
    • বারবার বমি

৩. ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS)

  • গুরুতর DHF-এর লক্ষণগুলোসহ:
    • রক্তচাপ কমে যাওয়া
    • দুর্বল পালস
    • ঠাণ্ডা এবং ঘামযুক্ত ত্বক
    • গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া

এই লক্ষণগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ডেঙ্গুর সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং তরল গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে এবং এটি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

১. মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করুন

  • পানির পাত্র, ফুলের টব, ভাঙা পাত্র, বা যেকোনো স্থান যেখানে পানি জমে থাকতে পারে, সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  • আবর্জনা সঠিকভাবে ফেলে দিন এবং জমে থাকা পানির উৎস বন্ধ করুন।

২. মশা থেকে সুরক্ষা পান

  • মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার করুন।
  • মশারোধক স্প্রে বা ক্রিম ব্যবহার করুন।
  • দীর্ঘ হাতা এবং পা ঢাকা কাপড় পরিধান করুন, বিশেষত সন্ধ্যা এবং ভোরে।

৩. সচেতনতা বৃদ্ধি করুন

  • ডেঙ্গুর লক্ষণ যেমন উচ্চ জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা, এবং শরীরে লালচে দাগ সম্পর্কে সবাইকে জানাতে প্রচার চালান।
  • স্থানীয় জনগণ এবং স্কুলে সচেতনতা কর্মশালা আয়োজন করুন।

৪. সরকারি এবং স্থানীয় সহযোগিতা

  • স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক প্রয়োগ করুন।
  • সমাজে সাপ্তাহিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিন নির্ধারণ করুন।

৫. প্রাথমিক চিকিৎসা এবং চিকিৎসা গ্রহণ

  • ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

৬. ডিজিটাল প্রচারণা

  • সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা ভিডিও, পোস্টার এবং অ্যানিমেশন শেয়ার করুন।
  • QR কোডযুক্ত পোস্টার ব্যবহার করুন, যা স্ক্যান করলে ডেঙ্গু প্রতিরোধের তথ্য সরবরাহ করবে।

৭. কমিউনিটি লিডারদের যুক্ত করুন

  • স্থানীয় নেতা এবং স্কুল শিক্ষকদের মাধ্যমে গ্রামে-গ্রামে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করুন।

ডেঙ্গু থেকে গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর (DHF): এটি রক্তপাত, প্লাজমা লিক এবং অঙ্গ বিকলতার কারণ হতে পারে।
  • ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS): এটি রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণ হতে পারে।
  • অঙ্গ বিকলতা: বিশেষত যকৃত, কিডনি এবং হৃদপিণ্ডে গুরুতর ক্ষতি হতে পারে।
  • রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ কমে যাওয়া (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া), যা সহজেই রক্তক্ষরণ হতে পারে।

এই ধরণের জটিলতা প্রতিরোধে প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।